পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সফলতা পেয়েছেন খুব অল্প সংখ্যক মানুষ -এমন কথা বেশিরভাগ বিনিয়োগকারী বলেন। তবে যারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তারা কি কখনো মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করেছিলেন -এমন প্রশ্নের উত্তর মেলেনা।
যারা বিনিয়োগ করেছেন, তারা সফল। বিনিয়োগ করতে আগ্রহী যারা, তাদের উদ্দেশ্যে কথা হলো- মিউচ্যুয়াল ফান্ডে কেন বিনিয়োগ করবেন? মিউচ্যুয়াল ফান্ড ছাড়া মুনাফা লাভের উদ্দেশ্য থাকলে এমন আয়ের উৎসমুখ বাংলাদেশ বা পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রে রয়েছে। সেখানে বিনিয়োগ করা তাদের পক্ষে ভালো এবং মুনাফাও অনেক ভালো মেলে।
তবে সবার আগে জানা উচিৎ, আপনি যে ব্যবসায় নামছেন তা কি হালাল?
মিউচুয়াল ফান্ডে কেন বিনিয়োগ করবেন : অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, দক্ষ এবং পেশাদার সম্পদ ব্যবস্থাপক আপনার সম্পদের নিরাপত্তা দেবেন। সাফল্যের উদ্দেশ্যে পরিকল্পনার সঙ্গে কোম্পানির বিনিয়োগ করে এবং সর্বোচ্চ মুনাফা তুলে নেয়। পুঁজিবাজারের এই বিনিয়োগ এবং আয় শরীয়া মোতাবেক হালাল।
বৈচিত্র্যকরণ : বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি দর হঠাৎ একসঙ্গে এবং একই অনুপাতে দাম পড়ে যায়। যাকে আমরা খাত হিসেবেও বিবেচনা করে থাকি। তবে মিউচুয়্যাল ফান্ডের এই ঝুঁকির সম্ভাবনা ক্ষীণ। রাষ্ট্রীয় বড় কোন সিদ্ধান্ত ছাড়া দরে প্রভাব পড়েনা।
তবে প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশে এই ফান্ডের কদর নেই কেন? সরকার বা ব্যক্তি পর্যায়ে আমরা ফান্ডের বিষয়ে মানুষকে এখনো অভিজ্ঞ করে তুলতে পারিনি। ভারতের বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিশেষ করে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেয়া হচ্ছে- মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করুন, নিরাপদ ভবিষ্যত গড়ুন।
আমাদের দেশে শেয়ারবাজারে সূচক এবং দর পতনে বিক্ষোভ করা হয়। কোন কোন বিনিয়োগকারী হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন তা তুলে ধরছে গণমাধ্যম। এখানে বিনিয়োগে উৎসাহী নয়, বরং হতাশ করা হচ্ছে। এখানে গুরুত্ত্বপূর্ণ কথা হলো- যিনি হতাশ হয়ে আত্মহত্যা করেছেন, তার পোর্টফোলিওতে কয়টি মিউচ্যুয়াল ফান্ড বা ইউনিট ছিল?
বাংলাদেশ এনিয়ে ভাবলেও এখনো কার্যকরী ভূমিকা রাখছে না। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে আমাদের অনেক শিক্ষা নেয়া যেতে পারে। এমনকি এসব ফান্ডের উদ্যোক্তারাও এগিয়ে আসছেন না। শেষ রয়সে স্কুল শিক্ষক তার পেনশনের টাকা কোথায় নির্ভাবনায় খাটাবেন। নিরাপদ বিনিয়োগ থেকে নতুন আয়ের মুখ দেখবেন। তরুণ প্রজন্মকে এগিয়ে নিয়ে তাদের জানাতে হবে, তবেই বিনিয়োগ আসবে- সমৃদ্ধ হবে বাংলাদেশ। তবে সচেতনতার বিকল্প নেই।
সুবিধাজনক ব্যবস্থা : এখানে বিনেয়াগ করলে শেয়ার নিয়ে বিচার বিশ্লেষণের কাজ অনেকটাই কমে যাবে। এখানে আপনি দর্শক, আপনার টেনশনের ভার সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানির। আর টেনশনের কারণ বলি- বিলি ব্যবস্থা খারাপ, দেরিতে লভ্যাংশ পাওয়া নিয়ে ভাবনা, দালাল বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলির কাছে যাওয়া, আরো আছে অনেক। মোট কথা আপনার ডায়াবেটিস বা হৃদরোগ বাড়ানোর সব উপকণ এখানে যথেষ্ট পারমাণে আছে।
অন্যদিকে মিউচুয়াল ফান্ড সময় বাঁচায়, বিনিয়োগ করা সহজ এবং নিশ্চিত মুনাফা।
কার লভ্যাংশ দেয়ার প্রবণতা বা ক্ষমতা কেমন : মধ্যম এবং দীর্ঘকালীন বিনিয়োগের মিউচ্যুয়াল ফান্ড উচ্চতর মুনাফা দেয়। কেননা মিউচুয়াল ফান্ডের ঝুলিতে বৈচিত্র্যকরণের সঙ্গে তাদের থাকে বাছাই করা বিভিন্ন মেয়াদের সিকিউরিটিজ, যা দেয় নিশ্চিত মুনাফা।
নিম্ন মূল্য : মূলধনী বাজারে প্রত্যক্ষভাবে বিনিয়োগ করার চেয়ে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা ব্যয় খুব কম। এতে বিনিয়োগকারীর ক্যাষ্টোডিয়াল বা অন্য অনেক খরচগুলি কমে।
সহজ লেনদেন: নেট এ্যাসেট ভ্যালু (এনএভি) মূল্যে মিউচ্যুয়াল ফান্ড থেকে ওপেন-এন্ড এর টাকা সহজেই পাওয়া যাবে। ক্লোজ এন্ড মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ক্ষেত্রে স্টক এক্সচেঞ্জে মার্কেট মূল্যের ভিত্তিতে ইউনিট বেচা যায় বা পুনরায় ক্রয় করা যায়।
স্বচ্ছতা : যে পরিকল্পনার মাধ্যমে এবং যে অনুপাতে বিনিয়োগ করা হয় এবং যা মুনাফা হচ্ছে তা লগ্নি মূল্যের চেয়ে নিয়মিত ব্যবধান তথ্য পাওয়া যাবে।
স্থিতিস্থাপকতা : Systematic investment planners (SIP) Systematic withdrawal plan (SWP) Dividend re-investment plan সুবিধা ও প্রয়োজন মত নির্দিষ্ট নিয়মে বিনিয়োগ করতে পারা যায় বা টাকা তোলা সহজ।।
সুনিয়ন্ত্রিত: সব মিউচ্যুয়াল ফান্ড বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) নথিভুক্ত, বিনিয়োগকারীর স্বার্থ সুরক্ষায় কঠোর নিয়য়ে নিয়ন্ত্রিত এবং পরিচালিত।
প্রতিকূল পরিবেশের আরো কথা হলো- বিনিয়োগের ব্যাপারে শেয়ার, ডিবেঞ্চার বা ফিক্সড ডিপোজিট সবকিছুতেই ঝুঁকি আছে। অর্থনীতি প্রতিকূল হলে শেয়ারের দাম পড়ে যেতে পারে। সুদজনিত পাওনা, জিবেঞ্চার বন্ডস এবং জমার উপর সুদ প্রতিষ্ঠান ঠিক সময় দিতে পারবে না। মুদ্রা স্ফীতির জন্য বিনিয়োগের উপর সুদের হারও কমে। ফলে ক্রয় ক্ষমতা কমতে থাকলে ঝুঁকিকে যখন নিয়ন্ত্রণ করা যায় না।
অভিজ্ঞ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ব্যবস্থাপক দক্ষ পরিচালনার মাধ্যমে ঝুঁকি অনেক কমিয়ে দেয় এবং সর্বোচ্চ মুনাফা করে বিনিয়োগকারীকে ফেরত দেয়।
এবারে দেখুন, মিউচুয়াল ফান্ডের প্রকার ও কার্যকারীতা
মেয়াদি মিউচুয়াল ফান্ড : নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে এবং প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে টাকা সংগ্রহ করে। মেয়াদ শেষে যা অবশিষ্ট থাকবে তা বিতরণ করে ফান্ড বিলুপ্ত হয়। তবে এই ফান্ডে যখন ইচ্ছা টাকা তোলা যাবে না। তালিকাভুক্ত মেয়াদী ফান্ড থেকে বিনিয়োগ প্রত্যাহার করতে হলে সেকেন্ডারি মার্কেটে ইউনিটের বাজার মূল্যই ভরসা। বাজার মূল্যের ভিত্তিতে বিনিয়োগকারীরা ইউনিটের লেনদেন করতে পারেন।
মেয়াদী বা ক্লোজ-এন্ড ফান্ডের বৈশিষ্ট্য : মেয়াদী মিউচ্যুয়াল ফান্ডে তহবিল খাটে নির্দিষ্ট মেয়াদে এবং বাংলাদেশে এ ধরণের ফান্ডের মেয়াদ সাধারণত ১০ থেকে ২০ বছরের হয়। মেয়াদ পূর্ণ হলে ফান্ডের অবসান ঘটানো হয়। তবে তা নির্ভর করে অধিকাংশ ইউনিটহোল্ডাদের সিদ্ধান্তের ওপর। এরমধ্যে হিসাব বছর শেষে ট্রাস্টি ইউনিটহোল্ডাদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করে। সম্পদ ব্যবস্থাপক প্রতিষ্ঠান মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করে।
পুঁজিবাজারের এ ফান্ডের ইউনিট লেনদেন করা যায়। পুঁজিবাজারে অনেক সময় এনএভি থেকে ইউনিটি প্রতি অনেক কম মূল্যে লেনদেন শুরু করে। আর এতে লোকসান হয় বিনিয়োগকারীদের।
মেয়াদি মিউচ্যুয়াল ফান্ড মেয়াদ শেষে ওপেন এন্ড ফান্ডে রুপান্তরিত হতে পারে। তবে তা নির্ভর করে অধিকাংশ ইউনিটহোল্ডাদের সিদ্ধান্তের ওপর। সাধারণ সভায় বিনিয়োগকারীদের মতামতের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
-সংগ্রহীত