Homeটিউটোরিয়াল কর্নারপুঁজিবাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল টার্ম ও ব্যবহার

পুঁজিবাজারের কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল টার্ম ও ব্যবহার

পুঁজিবাজারে কিছু টেকনিক্যাল টার্ম আছে, যেগুলো জানা একজন বিনিয়োগকারীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টেকনিক্যাল টার্মগুলো না জানলে আপনার লসে পড়ার সম্ভবনা বেশি। আসুন জেনে নেই কিছু গুরুত্বপূর্ণ টেকনিক্যাল টার্ম ও ব্যবহার।

ইপিএস : আর্নিং পার শেয়ার (EPS) শেয়ার কেনা-বেচার সিদ্ধান্তে যে টার্মটি সবচেয়ে গুরুত্বের সাথে দেখা হয় এটি তার মধ্যে অন্যতম। যে কোনও নির্ধারিত সময়ে একটি কোম্পানি শেয়ারপ্রতি কেমন লাভ-লস করছে তার হিসেব এটি, আপনার বিনিয়োগ কতটা সুরক্ষিত বা ঝুঁকিপূর্ণ সেটার সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দিবে ইপিএস।

একটি কোম্পানির মোট লাভের (বা ক্ষতির) অঙ্ককে যদি তার বাজারে থাকা মোট শেয়ার সংখ্যা দিয়ে ভাগ করা হয় তাহলে EPS পাওয়া যায়।

লভ্যাংশ:  লভ্যাংশ (DIVIDEND) একটি কোম্পানির তার মুনাফার যে অংশ শেয়ারহোল্ডারদের (বিরিয়োগকারীদের) মধ্যে বিতরণ করে  তাই লভ্যাংশ বা ডিভিডেন্ড। এটি নগদ টাকায় বা স্টক (শেয়ার) অথবা উভয় আকারে হতে পারে। DIVIDEND লভ্যাংশ সাধারণত শতাংশের হিসাবে প্রকাশ করা হয়। বিস্তারিত পড়তে লিংকটিতে যান  ডিভিডেন্ড কি? কখন কিনলে পাওয়া যায়

কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট ও চেয়ারম্যান : ম্যানেজমেন্টে মানে কোম্পানি চালায় কারা? তারা ব্যক্তি হিসেবে কেমন? তারা ব্যক্তি হিসেবে ভাল না হলে, কোম্পানিও আপনাদের কে ঠকাবে। আপনি যাদের সাথে ব্যবসা করবেন তারা খারাপ মানুষ হলে হয় অপনার পুঁজি যাবে আথবা আপনি ব্যবসা করে কিছুেই পাবেন না। এই বিষয়টি সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ম্যানেজমেন্টের সাথে সাথে কোম্পানি কে বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ তিনি অনেক সময় ম্যানেজমেন্টকে প্রভাবিত করেন।

পিই: PRICE-EARNINGS RATIO (P/E): P/E হচ্ছে একটি কোম্পানির শেয়ার তার EPS-এর কতগুন দামে বিক্রি হচ্ছে তার একটি পরিমাপ এবং আপনার বিনিয়োগকৃত টাকা যদি কোম্পানির বর্তমান আয়ের ধারাবাহিকতা টিকে থাকে তবে কত বছর পরে উঠবে তার হিসেব। আর আয় বা ইপিএস যদি বাড়ে বা কমে তবে পিইও কমে বা বেড়ে যেতে পারে। কোম্পানিটির মার্কেট প্রাইজ বাড়লে পিই বাড়বে আবার মার্কেট প্রাইজ কমলে পিই কমতে পারে যদি বর্তমান ইপিএস একই থাকে।

কোম্পানিটির মার্কেট প্রাইজকে বর্তমান ইপিএস দিয়ে ভাগ দিলে পিই পাওয়া যায়। যেমন- কোনো কোম্পানির EPS যদি হয় ৫ টাকা, আর বাজারে শেয়ারটির দাম থাকে ২০ টাকা (২০/৫=৪) , তার মানে কোম্পানির শেয়ারটি তার EPS-এর ৪ গুন দামে বিক্রি হচ্ছে।

অর্থাৎ আপনি যদি আপনার এই শেয়ারটি বিক্রি না করেন, এবং কোম্পানি যদি EPS-এর পুরোটাই লভ্যাংশ দেয়, তাহলে আপনার বিনিয়োগ করা টাকা আপনি ৪ বছরে ফেরত পাবেন।

নেট এসেট ভ্যলু: নেট এসেট ভ্যলু (NAV)। একটি কোম্পানির শেয়ার প্রতি কতো টাকার সম্পদ আছে তা জানতে পারবেন NAV দেখে। ধরুন কোনো একটি শেয়ার আপনি ৫০ টাকা করে কিনেছেন, বর্তমানে এই কোম্পানিটির NAV ২০ টাকা। ধরুন কোনো কারণে এই কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গেল, তাহলে আপনি কোম্পানির দেনা পরিশোধের পর সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত ফেরত পেতে পারেন।

কোম্পানি খাতা কলমে যে নেট এসেট ভ্যলু দেখায় বাস্তবে অনেক সময় তার সাথে পার্থক্য থাকতে পারে। কারণ অনেক কোম্পানি হয়তো বহু বছর তাদের সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন করায়নি। আবার অনেক কোম্পানি হয়তো সম্পদ পুনঃমূল্যায়নের নামে বাস্তব সম্পাদের থেকে বেশি দেখাচ্ছে? সম্পদ পুনঃমূল্যায়ন অস্বাভাবিক কিনা সেটা দেখতে হবে? প্রসঙ্গত বাংলাদেশে সম্পদ পুনঃমূল্যায়নের সঠিক কোন মানদন্ড বা নিয়ম-কানুন নাই।

মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশন: বাজারে একটি কোম্পানির যত শেয়ার আছে তার সাথে এই শেয়ার এর বাজার দর দিয়ে গুন করলেই পাওয়া যাবে কোম্পানিটির Market capitalization। তুলনামূলক ভাবে এটি বেশি হলে এর মানে হচ্ছে কোম্পানিটি একটি বড় মুলধনী কোম্পানি। সাধারণত বড় মুলধনী কোম্পানিতে বিনিয়োগের ঝুঁকি তুলনামুলকভাবে কম থাকে,সূচকের উঠা নামায় এবং মোট লেনদেনে বড় মার্কেট ক্যাপিটালাইজেশনের কোম্পানির ভূমিকা মূখ্য থাকে।

মার্কেট ভ্যালু : বাজারে শেয়ার যে দামে লেনদেন হয়, তাকে Market Value বলে। ধরুন কোন একটি শেয়ার আজ বেচা-কেনা হচ্ছে ১০০ টাকায়, তাহলে এই শেয়ারটির বর্তমান Market Value ১০০ টাকা।

ভলিউম: VOLUME কোনও নির্দিষ্ট দিনে একটি কোম্পানির শেয়ার মোট যতগুলো লেনদেন হবে, তাই হল সেই দিনের জন্য ঐ শেয়ারটির VOLUME। কোন শেয়ারের VOLUME বেশি মানে এটির লেনদেন বেশি হচ্ছে।

বার্ষিক রিপোর্ট: এই রিপোর্টটি পড়ে আপনি জানতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বছরে কোম্পানিটি কত টাকা আয়-ব্যয় করল, বছর শেষে লাভ না লোকসান হলো। কোম্পানির ঝুঁকি কোথায়, সম্ভবনা কোথায়? চেয়ারম্যানের ও ম্যানেজমেন্টর বক্তব্য। এটি বিনিয়োগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উৎস। বিনিয়োগের আগে সকল বিনিয়োগকারীর এটি মনযোগ দিয়ে পড়া উচিৎ।

বিড প্রাইজ: দিনের শেয়ারের বাজার মূল্য। অর্থাৎ শেয়ার কেনা বেচার সময় ক্রেতা বিক্রেতার সমঝতায় শেয়ারে যে মূল্য নির্ধারণ হয়, তাকেই আমরা BID PRICE বলি।

আপনার বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে আপনাকে অবশ্যই কোম্পানির লাভ-লোকসানের খবর রাখতে হবে। এক্সপার্ট, স্মার্ট বিনিয়োগকারী হতে হলে আপনাকে বিষয়গুলো জানতে হবে এবং কোম্পানির ব্যবসার গতিবিধির উপর সর্বদা নজর রেখে আপনার কস্টের টাকাকে ঝুঁকিমুক্ত রাখার প্রচেস্ট থাকতে হবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

৭ দিনে সর্বাধিক পঠিত

এ যাবৎ কালের সর্বাধিক পঠিত