শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ মানে ঝুঁকিপূর্ণ; নেই মুনাফা এবং অর্থের নিরাপত্তা -এমন ধারণা অনেকের। অতি সাধারণ এই বক্তব্য অনেকাংশে ভুল। অন্ধভাবে এবং অস্বচ্ছ ধারণা নিয়ে বিনিয়োগ মানেই লোকসানের সম্মুখীন হওয়া। তাই ঝুঁকিমুক্ত বিনিয়োগ এবং নিশ্চিত মুনাফা লাভে চাই মিউচুয়াল ফান্ড। যেখানে আপনার অর্থের সুরক্ষা এবং মুনাফা নিশ্চিত করে একটি অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি।
মিউচুয়াল ফান্ড কি: আমরা জানি, বিনিয়োগ সব সময় ঝুঁকিপূর্র্ণ। আর বিনিয়োগ সম্পর্কে যদি ধারণা না থাকে তবে তা আরও বেশি ঝুকিপূর্ণ। আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের বদ্ধমূল ধারণা- শেয়ার মার্কেট একটি সাধারণ জায়গা। এখানে বিনিয়োগ করতে বেশি ধারণার প্রয়োজন হয় না। তারা অন্ধভাবে অস্বচ্ছ ধারণার উপর বিনিয়োগ করে। ফলে তারা কখনো লাভবান বা লোকসানের সম্মুখীন হয়। অথচ তারা চাইলেই শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করে নিরাপদে এবং সহজে লাভবান হতে পারে।
শেয়ার মার্কেট সম্পর্কে জ্ঞান না থাকলেও বিনিয়োগ করতে পারেন। তবে জানা থাকতে হবে তারা কোথায় বিনিয়োগ করবেন। তা হচ্ছে- মিউচুয়াল ফান্ড। এখানে বিনিয়োগকারী তার বিনিয়োগ ঝুঁকি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নিয়ে আসতে পারেন।
বিনিয়োগ করবেন কোথায়? সেও জানা জরুরি।
আপনার বিনিয়োগ নিরাপত্তা দেবেন অ্যাসেট ম্যানেজার, একটি প্রতিষ্ঠান। মিউচুয়াল ফান্ডগুলো পরিচালনা করতে যার দক্ষতার বিকল্প নেই। বর্তমানে যে কয়টি অ্যাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি মার্কেটে কাজ করছে তাদের অনেকেই দক্ষতার সঙ্গে ফান্ডগুলো পরিচালনা করছে। তাই বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশ্যে বলা হয়, মিউচ্যুয়াল ফান্ড দেখে শুনে বিনিয়োগ করুণ এবং অহেতুক ঝুঁকি থেকে বেরিয়ে আসুন।
মিউচুয়াল ফান্ডের কারা পরিচালক এবং কিভাবে কাজ করে : আপনি শেয়ারবাজারে টাকা খাটাতে চান। অথচ কোন শেয়ারে কখন কত টাকা খাটাবেন, তা নিয়ে আপনার কোন ধারণা নেই। এ ক্ষেত্রে সোজা উপায় হল, মিউচুয়াল ফান্ডে বিনিয়োগ করা। ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র অনেক বিনিয়োগকারীর কাছ থেকে টাকা তুলে সেই টাকায় প্রচুর শেয়ার কেনা হয়, তাকে বলে মিউচুয়াল ফান্ড। আরো সহজ করে বলা হলে- একটি সমিতি। সবার অর্থ গড়ে ওঠে একটি প্রতিষ্ঠান।
মিউচুয়াল ফান্ড কোন কোম্পানির শেয়ার নয়; বাজারে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত মুনাফা অ্যাসেট ম্যানেজার (সম্পদ ব্যবস্থাপনা কোম্পানি) তার খরচ বাদ দিয়ে উদ্যোক্তা ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মাঝে বন্টক করে।
ধরা যাক, ‘এক্স’ নামের একটি অ্যসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি মিউচুয়াল ফান্ড স্কিম চালু করল। এর আওতায় ১০০ কোটি টাকা সংগ্রহ করা হল। সেই টাকা খাটাতে শুরু করে শেয়ার মার্কেটে। যদি ইক্যুইটি স্কিমে বিনিয়োগ করা হয়, তা হলে বিনিয়োগ হবে মূলত শেয়ারে। যদি ডেট স্কিমে করা হয়, তবে বিনিয়োগ হবে ঋণপত্রে।
ধরা যাক, শুরুতে একজন বিনিয়োগকারীকে ইউনিট প্রতি ১০ টাকা দেয়ার প্রস্তাব দিল সংশ্লিষ্ট মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিকে অর্থ্যাৎ একটা ইউনিট কিনতে হবে ১০ টাকা দিয়ে। (ফান্ডের শেয়ারকে ইউনিট বলা হয়) এক হাজার ইউনিট কিনতে খরচ হবে ১০ হাজার টাকা।
এক বছর পর দেখা গেল, ইউনিট প্রতি বাজারদর বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১২ টাকায়। এবার সেই এক হাজার ইউনিট বিক্রি করলে পাওয়া যাবে ১২ হাজার টাকা। বছর শেষে লাভ হবে দুই হাজার টাকা। অন্যদিকে ইউনিটগুলো যিনি কিনবেন তাকে প্রতি ইউনিটে ১২ টাকা খরচ করতে হবে।
আসলে মিউচুয়াল ফান্ড হলো পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার দ্বারা নির্মিত এবং পরিচালিত। দক্ষ ব্যবস্থাপক দিয়ে নিয়ন্ত্রিত একটি ব্যবস্থাপনা। যা ছোট ছোট বিনিয়োগকারীদের থেকে টাকা সংগ্রহ করে পোর্টফোলিও বানিয়ে বহু সেক্টরে বিনিয়োগ করে থাকে।
পুঁজিবাজার অত্যন্ত সংবেদনশীল একটি বাজার। তাই পেশাদার ফান্ড ম্যানেজার ও তাদের গবেষকরা বিনিয়োগ করার আগে সেখানকার অতীত এবং বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা নিরীক্ষণ করে। তারা পরিসংখ্যান করে বিভিন্ন বিচারের নিরিখে নিকট ভবিষ্যৎ ও তার অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে পুরোপুরি স্পষ্ট হন। বিভিন্ন নিরিক্ষার মাধ্যমে আগামীর অর্থনৈতিক ছায়ালিপি তৈরি এবং বিনিয়োগের কৌশল নির্ধারণ করেন। যে কারণে বিনিয়োগকারীর ঝুঁকির পরিমাণ অনেকাংশেই হ্রাস পায় এবং বিনিয়োগের পথ সুগম করে তোলে।
আরো বলা যায়, মিউচুয়াল ফান্ড বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে একটি ট্রাস্ট বা অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি হিসেবে তা পরিচালনা করে। অতি সুচারুভাবে পরিচালানার পরে সঞ্চিত লভ্যাংশ বন্টন করে থাকে। অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কাজের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের এবং অল্প সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করে।
-সংগ্রহীত